জামালপুরে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা সহ ফসলি জমি
মো. আলমগীর, জামালপুর।
জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিনটি ইউনিয়নের ১০ টি গ্রামে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে বসত ভিটা সহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপত্র নদ ও দশানী নদী। সেই নদ ও নদী বরাবরের মতই চিরচেনা রূপে ফিরেছে আবার। উপজেলার ১০টি গ্রামে নদ-নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক পরিবার এখন নি:স্ব। সম্প্রতি বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতাও বেড়েছে।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া, চর আইরমারী, চর কামালের বার্ত্তী, মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা, আউল পাড়া, সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ কুশল নগর ও সাজিমারা গ্রামে নদী ভাঙ্গন চলমান রয়েছে। নদী ভাঙ্গনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।
প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙ্গা মানুষের। নদী ভাঙ্গনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবার গুলোর। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছে না।
এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।
রবিবার (৪সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিলাখিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামে নদী ভাঙ্গনের খবর নিতে গেলে দেখা যায়, দশানী নদীর ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় একটি কাঠের বাগান কেটে ফেলছেন জমির মালিক জিয়াউর রহমান।
তিনি জানান, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের গ্রামে ভাঙ্গন রোধে দুইশত মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলেছে কিন্তু নদীর পানির তীব্র স্রোত ও ভাঙ্গনে ২০ মিটার পর্যন্ত স্থাপিত জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে গেছে। পাশাপাশি দুইশত মিটারের বাইরেও নতুন করে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামকে বাঁচাতে আরও দুইশত মিটার জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া ও আইরমারী খান পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মত এবারও তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই দুটি গ্রামের অন্তত ২০ টি পরিবার দশানী নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন।
বাংগাল পাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব। এই পরিবারের কমপক্ষে ৬ জন বসতভিটা হারিয়ে ঢাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তিনি জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাপ দাদার ভিটা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই মানুষ বসত ভিটা ও ফসলি জমি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে গ্রাম গুলো বিলীন হতে পারে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য , জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সিসি রøকের একটি প্রকল্প সাবমিট করা হবে। আশাকরি প্রকল্পটি পাশ হলে নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে স্থায়ী সমাধান হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।