নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জামালপুরে মানববন্ধন
মো. আলমগীর, জামালপুর।
নির্ভিক সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখা।
শনিবার (১৭জুন) সকাল ১১টার দিকে শহরের দয়াময়ী মোড় শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীর সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জলিল, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল, জামালপুর টেলিভিশন রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি ফজলে এলাহী
https://71times.com মাকাম, জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের সভাপতি অজয় কুমার পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ
জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেন বণিক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উপদেষ্টা আমির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুুমন মাহমুদ, উন্নয়ন সংঘের সহকারী পরিচালক কর্মসূচি মুর্শেদ ইকবাল, নারী নেত্রী শামীমা খান, জেলা দুপ্রক সদস্য আশরাফুজ্জামান প্রমুখ।
মানববন্ধনে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, নির্ভিক সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা ছিল বকশিগঞ্জের তথাকথিত রাজনৈতিক ব্যক্তি সন্ত্রাসী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তিনি প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাদের এই শাস্তি সম্পূর্ণ করার দাবিও জানান।
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জলিল বলেন, আমরা প্রখর রোদে দাড়িয়ে আজ আন্দোলনে নেমেছি। সাংবাদিকরা হলো এই সমাজের বিবেক, সমাজের দর্পণ। সেই দর্পণ যদি ঘোলা হয়ে যায়, তাহলে সমাজও ঘোলা হয়ে যাবে। কাজেই সাংবাদিকদের যারা মুখ, চোখ বন্ধ এবং হত্যার করার চেষ্টা করছে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আজকে যারা এ কাজে উৎসাহিত করছে সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে তারা এই সমাজকে বিব্রত করছে। জামালপুরের শান্ত পরিবেশকে দুই একটি ঘটনায় কলঙ্কিত করেছে। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডে শুধু জামালপুরে নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ আজ ফুঁসে উঠেছে। কাজেই সাংবাদিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল বলেন, একজন সাংবাদিকের প্রাণহানির মধ্যদিয়ে জামালপুর সহ গোটা বাংলাদেশে আজ কলঙ্কিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জামালপুর একটি শান্তিপ্রিয় শহর। জামালপুরের ইতিহাসে এই প্রথম সাংবাদিক নাদিমের রক্তে রঞ্জিত হয়ে আমাদের পবিত্র মাটি আজ কলঙ্কিত হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে বুজা যায় জামালপুরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক নয়। গত একমাসে জেলায় হত্যাকান্ড, নারী ধর্ষন, নির্যাতন সহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে এবং কি শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি। আমরা যখন সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ করছি ঠিক সেই মুহুর্তে জামালপুর সদরের শরিফপুরে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনার পর্যালোচনা করলেই বুজা যায় জামালপুরের আইনশৃঙ্খলা অবস্থার কি পরিস্থিতি। তিনি আরও বলেন, নাদিম হত্যাকান্ডকে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ একটি গণমাধ্যমে অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিহাসমূলক অর্বানীন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হত্যাটি হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তাকে মারা হয়েছিল সতর্ক করার জন্য। একজন পুলিশ সুপার দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্যে আমরা সংগতভাবেই বলতে পারি এই মামলাকে নিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাতি করার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশ সুপারের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার এবং দু:খ প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার সময় পাটহারি মোড়ে ওতপেতে থাকা ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর হামলা করে। হামলায় সাংবাদিক গোমাল রব্বানী নাদিম গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে রাতেই তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আনুমানিক আড়াইটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।