বই কেনার টাকা ছিল না, বন্ধুর বই পড়ে সহকারী জজ হলেন নুর
পঞ্চগড়ের আসাদুজ্জামান নুরের অনুপ্রেরণামূলক সাফল্যের গল্প
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম যে মানুষের জীবনের পথ বদলে দিতে পারে, তার প্রমাণ পঞ্চগড়ের আসাদুজ্জামান নুর। বই কেনার সামর্থ্য না থাকলেও বন্ধুর বই ধার করে পড়েই তিনি সহকারী জজ হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) ১৬তম নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পঞ্চগড় সদরের ব্যারিস্টার বাজার এলাকার বাসিন্দা, মৃত নুর বাদশার ছেলে নুর। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন এবং বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত।
ছোটবেলায় বাবা হারানো, মাত্র ৬ শতক জমির বসতভিটা, মায়ের সেলাই মেশিনের আয়ে চলা সংসার—সবকিছু সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করলেও প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারায় ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। এক বছর পর সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অর্থকষ্টে অন্যের দোকানে কাজ করেছেন, পেয়েছেন ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ’ এর সহায়তা। সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল বন্ধুরা—হোসনে মোবারক সাগর, নোসাইব মোহাম্মদ নাজ্জাসি এবং ১৫তম বিজেএসসি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত সাকিব আহমেদ ইমন। তাদের কাছ থেকেই বই নিয়ে তিনি প্রস্তুতি শুরু করেন।
নুর বলেন, “আমার নিজের বই কেনার সামর্থ্য ছিল না। বন্ধুদের বই পড়ে, তাদের সহযোগিতায় আমি আজ এ অবস্থানে।” তিনি আরও বলেন, “ন্যায় বিচারকের সম্মান শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও। আমি চাই, আমার মাধ্যমে কেউ যেন অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।”
নুরের মা রশিদা পারভীন বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম আমার ছেলে বড় কিছু করবে। কঠিন সময়েও চেষ্টা করেছি ছেলেকে পড়াশোনা করাতে। আজ সে সহকারী জজ—এটাই আমার জীবনের বড় সান্ত্বনা।”
আইন পেশায় আগ্রহীদের উদ্দেশে নুর বলেন, “অনার্স শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু ডিগ্রির অপেক্ষা করলে চাকরির প্রস্তুতি কঠিন হয়ে যায়। আমাদের হলে বলতাম, ‘প্রথমবারেই হলে দিতে হবে, দ্বিতীয়বার দিতে হলে ফার্স্ট হতে হবে।’ এমন মানসিকতা থাকলে সাফল্য সম্ভব।”
—
লেখক: হুমায়ুন কবির চৌধুরী
সংবাদদাতা, 71times.com