বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক অনুবাদ ছাড়া ভাষার বৈশ্বিক
মর্যাদা অর্জন সম্ভব নয়: সেলিনা হোসেন
বাংলাকে বৈশ্বিক রূপ দিতে এ ভাষার সাহিত্য ব্যাপকভাবে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা দরকার বলে মত দিয়েছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এজন্য বাংলা একাডেমির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান স্বাধীনতা পদকজয়ী এ লেখিকা।
সোমবার গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিনা হোসেন বলেন, আমরা শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছি। কিন্তু যদি বাংলা ভাষায় লেখা গল্প উপন্যাস অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা না হয় তাহলে এ সম্পর্কে বিশ্বের অন্য ভাষাভাষী মানুষ জানতে পারবে না। বিভিন্ন দেশের মানুষের জানার জন্য অনুবাদ প্রয়োজন। অনুবাদ না হলে বাংলাকে কেবল একটা দিবসেই আটকে থাকবে।
তরুণদের দেশের জন্য সমাজের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এ লেখক বলেন, তোমাদের পাশের মানুষ যদি খারাপ থাকে, দরিদ্র হয় তাহলে তাকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে ভালো থাকলেই জীবন স্বার্থক হবে। তোমরা যদি তোমাদের মানবিক বোধকে, মানবিক দর্শনকে অন্যের মাঝে সঞ্চারিত করে আলোকিত করতে পার তাহলেই জীবন স্বার্থক হবে। আজকের এ আয়োজন মহান হবে।
গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ‘বন্ধুসভার জয়যাত্রা ও সাংস্কৃতিক দুপুর’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্তু উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ।
সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে গ্রিন বিজনেস স্কুলের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. মো. গোলাম সামদানী ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে. এম. ওয়াজেদ কবির, ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড স্যোশাল সাইন্সেসের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল্লাহ, ফ্যাকাল্টি অব ল এর ডিন অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব, জার্নালিজম ও মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. অলিউর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মেহেদী হাসান, ক্লাবের মডারেটর সরোজ মেহেদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নাচের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অতিথিকে ফুলের তোড়া, উত্তরীয় ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
উদ্বোধনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের আমাদের ভাষা দক্ষতা অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু আমরা যে ভাষায় কথা বলছি যে ভাষাটা বুঝে বা না বুঝে জগাখিচুড়ি করে ফেলছি। বাংলার মধ্যে শুধু ইংরেজি মিশিয়ে দিচ্ছি। এতে ভাষার মর্যাদা খর্ব হচ্ছে। আমাদের উচিৎ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিৎ করা।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে আজকে বড় বড় যুদ্ধ চলছে। আমাদের দেশও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে শান্তি ও অহিংসার যে বার্তা সেটাই হলো আমাদের মূল বার্তা। আমরা অহিংস তখনই হবো যখন প্রকৃতির কাছাকাছি যাবো। গল্প উপন্যাস কবিতা আমাদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায়। সেলিনা হোসেনের লেখায় সেসব প্রকৃতির বর্ণনা পাওয়া যায়।
তিনি তরুণদের বেশি বেশি পাঠে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।