বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সরকারের মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের প্রচার থাকলেও মাঠ পর্যায়ে নেই স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা ৫০ এর ৩ এ স্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে, “পরিষদ নাগরিক সনদে বর্ণিত আধুনিক সেবা সংক্রান্ত বিষয় সহ সরকারিভাবে প্রদত্ত সকল সেবার বিবরণ উন্নতর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিকদের জ্ঞাত করিবার ব্যবস্থা করিবে”। এর ধারাবাহিকতায় এটুআই, মন্ত্রপিরিষদ বিভাগ, বেসিস ও ডিওআইসিটি এর তত্ত্বাবধায়নে সারাদেশে ৪৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি ওয়েবসাইট আছে। কিন্তু অপুর্ণাঙ্গ ও অসম্পূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ করার হেতু এই প্রচারণা বা তালিকা জনসম্মুখে না আসায় বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি, যার দায় এড়াতে পারেন না ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। সরকারের ভাবমূর্তি আর প্রকল্পের স্বচ্ছতা বাড়াতে মাঠ পর্যায় প্রকল্পের এবং উন্নয়নের তালিকা প্রকাশ এখন সাধারণ জনগণের সময়ের দাবি।
বর্তমান সরকারের এক যুগের বেশি মেয়াদকালে মেগা প্রকল্পের প্রচার-প্রচারণা থাকলেও জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় সরকারের উন্নয়ন বাস্তবায়নের নেই প্রচারণা। প্রান্তিক সাধারণ মানুষের জীবন মান পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য টিআর,কাবিখা,এডিপি,এলজি এসপি,জনস্বাস্থ্য, বিএডিসি,সমাজ সেবা,যুব উন্নয়ন,মৎস্য,প্রাণীসম্পদ,নারী ও মহিলা বিষয়ক,শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কি কি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হয়েছে তার কোন তালিকা নেই। এতে করে মাঠ পর্যায়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র না থাকায় সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রকল্প গ্রাম পর্যায় বাস্তবায়িত হলেও প্রচারণা অভাবে নিজ এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে অবগত নেই সাধারণ মানুষ। নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা আর দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র না থাকায় সাধারণ মানুষের অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। উন্নয়নের নামে গোপন বরাদ্দ মাঠ পর্যায় এনে ভাগ বাটোয়ারা করারও অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায় সময়।
মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া জাহাঙ্গীর বর্তমানে ধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করছেন। ধুম ইউনিয়ন পরিষদ এর ওয়েবসাইটে গিয়ে নোটিশ বোর্ডে পাওয়া যায়নি কোনো নোটিশ। সুবিধাভোগীর তালিকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক, হতদরিদ্র তালিকা, ভিজিএফ, মহিলা বিষয়ক, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি, সমাজসেবা বিষয়ক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, বিআরডিবি, প্রবাসীদের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও হাটবাজারের তালিকায় নেই কেনো তথ্য। এছাড়া কাবিখা, কাবিটা, টি আর, জি আর, এল জি এস পি, এল জিইডি সহ কেনো প্রকল্পের নেই কোনো তথ্য। এলাকার প্রখ্যাত ব্যাক্তিত্ত্বদের নাম পরিচয় ও কর্মজীবন ওয়েবসাইটে সন্নিবেশ করার মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের কাছে গৌরব ও অহংকারের কৃতি সন্তানদের নাম তুলে ধরার প্রয়াস থেকে প্রতিটি সাইটে প্রখ্যাত ব্যাক্তিত্ব নামে একটি অপশন দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে নাম নেই ধুম ইউনিয়নের কৃতিসন্তান দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ত্ব মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বার বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিঃ মোশারফ হোসেন এমপি সাহেবের। ইউনিয়ন পরিষদ বিধি ৫৮ এর ২ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, “প্রত্যেক অর্থ বৎসরের শেষে ইউনিয়ন পরিষদ উক্ত অর্থ বৎসরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করিবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের সকল স্থায়ী কমিটি ও জনসাধারণের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশন এই হিসাব পেশ করিবে।” এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, “ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট কত আমার জানা নেই, সচিবের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নেন।”
ধুম ইউনিয়নের মোবারকঘোনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে কোথাও উন্নয়নের কেনো ধরনের তালিকা নেই। বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদকালে কি কি উন্নয়ন হচ্ছে বা আগামীতে কি হবে তার তালিকার সাইনবোর্ড কিংবা অনলাইনে কেনো তথ্য নেই। দৃশ্যমান প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ এবং কাজের শিডিউল সম্পর্কে কোনো কিছু লেখা থাকে না, ফলে সাধারণ মানুষ কিছু বলতেও পারে না। এছাড়াও কিছু অসাধু কর্মকর্তা আর দলীয় নেতাকর্মীরা গোপনে প্রকল্প নিয়ে এসে কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেন। একই ইউনিয়নের নাহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর জানান, শুধু সংসদ আর ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় জানা যায় উন্নয়নের কিছু কথা। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক কি কি উন্নয়ন হয়েছে বা হবে তার সুনির্দষ্ট কোনো তালিকা দেওয়া থাকে না। অনুরূপভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া জাহাঙ্গীর এর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন মীরসরাই উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিগণ।