• রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
জামালপুরে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দোস্ত এইডের শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত সামিউন বাসির: গ্রামের মাটিতে জন্ম নেওয়া এক নিরব যোদ্ধার গল্প জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত জামালপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিটে গরু, ছাগল, অটোগাড়ি ও ঘর পুড়ে ছাই, ক্ষতিগ্রস্ত ৫ পরিবার এপ্রিলে নয় ডিসেম্বরেই নির্বাচন চান ইনসানিয়াত বিপ্লব,বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা ইমাম হায়াত। নরিন্দ্রপুর পূর্বপাড়া যুব উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন জামালপুরে ঝুমকা হস্তশিল্প সমিতির মাধ্যমে ৫০টি গরুর কোরবানি, ১৭৫০ পরিবারের মাঝে মাংস বিতরণ ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও সাংবাদিক সমাজকে জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের শুভেচ্ছা দৈনিক বরুড়া কণ্ঠের মতবিনিময় সভা ও আইডি কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠিত” কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ৪০১ স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসেছে”

“স্বপ্ন, সাধনা আর মানবিকতার গল্প—একজন গ্রামীণ তরুণ যিনি হয়ে উঠেছেন শাকপুরের আশার আলো”

সামিউন বাসির: গ্রামের মাটিতে জন্ম নেওয়া এক নিরব যোদ্ধার গল্প

71Times / ৮৭০৪৮ Time View
Update : রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

সামিউন বাসির: গ্রামের মাটিতে জন্ম নেওয়া এক নিরব যোদ্ধার গল্প

✍️ হুমায়ুন কবির চৌধুরী

শীতল হাওয়ায় দোল খাওয়া সবুজ ধানের মাঠ, পাখির কুজন আর নদীর কলতানে ঘেরা বরুড়া উপজেলার এক মনোরম গ্রাম শাকপুর। এই শাকপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায়, ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর, এক সাদামাটা পরিবারে জন্ম নেন মোঃ সামিউন বাসির—যিনি এখন গ্রামের মানুষের কাছে শুধু একজন চিকিৎসা সহায়তাকারী নন, বরং একজন নির্ভরতার প্রতীক, মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।

🎓 ছোটবেলার স্বপ্ন আর বইয়ের পাতায় নিজেকে গড়ে তোলা

সামিউনের শৈশব কেটেছে শাকপুরের সরল–নির্মল পরিবেশে। গ্রামের উত্তরপাড়া রুস্তম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। সেখানেই শুরু হয় তাঁর স্বপ্ন দেখা—”একদিন মানুষের জন্য কিছু করবো”। পরবর্তী সময়ে তিনি ভর্তি হন শাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানেই তৈরি হয় তাঁর মেধা, নৈতিকতা ও মানবিক বোধের ভিত্তিভূমি।

এরপর কলেজ জীবন শুরু হয় সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরুড়ায়। ক্লাসের সীমানা পেরিয়ে সমাজের সমস্যাগুলোর প্রতিও তাঁর চোখ ছিল নিবদ্ধ—এই বোধই তাঁকে তৈরি করে তোলে এক ব্যতিক্রমী তরুণ হিসেবে।

💼 চিকিৎসা সহায়তার পথে প্রথম পা রাখা

২০১৪ সাল। জীবনের বাস্তব মঞ্চে পা রাখার সেই বছরেই তিনি CPTDDT কোর্স শেষ করে যোগ দেন কুমিল্লা ডেলটা হাসপাতালে চিকিৎসা সহকারি হিসেবে। এর পরের বছরগুলোতে নিজেকে গড়েছেন একনিষ্ঠ পরিশ্রমে:

BDHS-এর সদস্যপদ লাভ (২০১৭)

BCDS কোর্স সমাপ্ত

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে FTC পদে যোগদান (২০১৭)

চিলড্রেনস হাসপাতাল, ঢাকা – MCH কোর্স সম্পন্ন (২০১৯)

SAARC Human Rights Foundation – Central – শিক্ষা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ (২০১৯)

🏥 “ডেন্টাল কেয়ার” – গ্রামের হৃদয়ে একটি আস্থার কেন্দ্র

নিজের গ্রামের মানুষের কথা ভাবতে ভাবতেই একদিন শাকপুর নতুন বাজারে গড়ে তুললেন নিজস্ব ফার্মেসি ও চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র – “ডেন্টাল কেয়ার”। এখানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আশেপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষ, যাঁদের পক্ষে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি তাঁদের শুধু চিকিৎসা দেন না, দেন সাহস, আশ্বাস আর একটি আলোকিত ভবিষ্যতের দিশা।
🦠 কোভিডকাল: যখন সামিউন ছিলেন শাকপুরের নির্ভীক রক্ষাকবচ

২০২০ সালের ভয়াবহ কোভিড-১৯ মহামারি—যেখানে মানুষ দূরে সরে যাচ্ছিল, আতঙ্কে ছিল পরিবার-পরিজন; ঠিক সেই সময় সামিউন বাসির হয়ে উঠেন একজন নির্ভীক ফ্রন্টলাইনার। নিজ হাতে অক্সিজেন পৌঁছে দেন আক্রান্ত রোগীর কাছে, নিজের অর্থে ওষুধ কিনে দেন দরিদ্রদের, মানসিক সাহস দেন আতঙ্কিত মানুষের।
এই সময়ই অনেকে তাঁকে ডাক্তার বলেই জানতেন। অথচ নিজের মুখে কখনো তিনি নিজেকে বড় করে বলেননি—সেবাই ছিল তাঁর একমাত্র পরিচয়।
🌾 মানবতার পাশে দাঁড়ানো – যেন তাঁর জীবনের ধর্ম

চিকিৎসার বাইরেও সমাজসেবার এক উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠেছেন সামিউন বাসির। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ, বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, প্রতিবছর গ্রামের ১০ জন ইয়াতিম ছাত্রকে আর্থিক সহায়তা, ছাত্র আন্দোলনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া—এসব যেন তাঁর জীবনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ব্যক্তিগত বিপদ—যেখানেই মানুষের প্রয়োজন, সেখানেই হাজির হন তিনি।

👤 একটি পরিচয়ের ভিতরে অনেক কিছু লুকানো থাকে

পূর্ণ নাম: মোঃ আব্দুস সামিউন বাসির

পিতা: মোঃ সফিকুল ইসলাম

মাতা: রহিমা বেগম

জন্ম তারিখ: ২৬ নভেম্বর ১৯৯৬

জন্মস্থান: শাকপুর, বরুড়া, কুমিল্লা

বর্তমান ঠিকানা: কুমিল্লা

নিজস্ব প্রতিষ্ঠান: ডেন্টাল কেয়ার, শাকপুর নতুন বাজার

বর্তমান পদবী: শিক্ষা সম্পাদক, SAARC Human Rights Foundation – Central

🏅 শেষ কথা নয়, শুরু বলা ভালো

সামিউন বাসির কোনো প্রচারবিমুখ কর্মী নন। তাঁর চোখে উচ্চাভিলাষ নেই, আছে ছোট ছোট কাজ দিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অদম্য আকাঙ্ক্ষা। গ্রামের মাটিতে গড়ে ওঠা এই নিরব যোদ্ধা প্রমাণ করেছেন, সাহস ও সদিচ্ছা থাকলে শহর নয়, গ্রামের বুকেই গড়ে ওঠে অনুপ্রেরণার মানুষ।

✒️ লেখক:
হুমায়ুন কবির চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক, ৭১টাইমস ডটকম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর