সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিা (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ রংপুর বিভাগে ঘাস এখন সবুজ সোনায় পরিনত হয়েছে। গো খাদ্যের সঙ্কট, কম খরচে বেশি লাভ ও গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর বিভাগে বাণিজ্যিকভাবে পাকচং, নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছে কৃষক। অন্য দিকে ঘাস চাষ করে নিজের গবাদিপশুর খাদ্যচাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করে বার্তি আয় করছেন অনেকে। বিভিন্ন উপজেলায় ভ্যানে করে ফেরী করে ঘাস বিক্রি করে নিজের কর্মসংস্থান নিজেই সৃষ্টি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। সরেজমিনে জেলার কয়টি উপজেলায় বিভিন্ন ঘাসের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ পাতার ঘাসের সমাহার। ঘাস চাষে ভাগ্য বদল ও কর্মসংস্থান হতে পারে এটা আগে কখনও ভাবাই যায় নি। প্রাণী সম্পদ বিভাগের উদ্ভাবনি ও পরিকল্পনায় গরু খামারীদের কাছে ঘাস যেন এখন সবুজ সোনায় পরিনত হয়েছে। পীরগাছা থেকে ভ্যানে করে ঘাস বিক্রি করতে আসা তরিকুল জানান, দামুর চাকলা বাজারের পাশে এই পাকচং জাম্বু ঘাস চাষ হয়। সেখান থেকে আটি ৬টাকা করে কিনে ফেরী করে ১০টাকা বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ আয় হয়। তার মতো অনেকেই এখন বেকার বসে না থেকে ঘাস বিক্রি করে সংসার চালায়। একই কথা জানালেন জগজিবন গ্রামের ঘাস বিক্রেতা মোফাজ্জল। ঘাস চাষি নুরনবী ও ইন্দ্রজিৎ ভুট্টু জানান, সার তেলসহ কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অন্যান্য ফসল চাষে উৎপাদন খরচই যেখানে উঠছে না, সেখানে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এবং নিজের খামারের গরুর খাদ্য চাহিদা মিটাতে এ ঘাস চাষ করছেন তারা। গো-খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে তারা ঘাস বিক্রি করে বার্তি আয়ও করছেন। তারা জানান ঘাস বিক্রিতে শতশত লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কাউনিয়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিঞ্চিতা রহমান জানান, উপজেলায় ৭৭৬টি গরুর খামারসহ ৮৫৬৯১টি গরু রয়েছে। উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩৩ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। গো-খাদ্যের চাহিদা প্রায় ৩৪৩টন। ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৪৩ টন। দুধের উৎপাদন বাড়াতে দিন দিন নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাসচাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের মাঝে পাকচং জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি আগ্রহী খামারি ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। উপজেলায় প্রায় ২০হেক্টর জমিতে ঘাস চাষাবাদ হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোঃ জোবাইদুল কবির বলেন, গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাস। পুষ্টিকর ঘাসে গবাদিপশুর দেহ গঠনকারী আমিষ উপাদানসহ প্রায় সব ধরনের উপাদান মজুদ থাকে। উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল ঘাসের মধ্যে পাকচং ও নেপিয়ার উল্লেখযোগ্য। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। তিনি আরও জানান, সাইলেজ তৈরী করলে অনেক সবুজ ঘাস একসাথে সংরক্ষণ করা যায়। এই সাইলেজ তৈরী করলে বছরব্যাপী রসালো ফাইবারযুক্ত ঘাসের সরবরাহ পাওয়া যায়। সাইলেজ তৈরী করলে খাদ্য অপচয় কম হয় কারণ গাজন প্রক্রিয়ায় ঘাসের শক্ত অংশ খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে। সাইলেজের মিষ্টি সুগন্ধ গবাদিপশুর খাবার রুচি বাড়িয়ে দেয়। সংরক্ষণের ৪০দিন পর বছরের যে কোন সময় সংরক্ষিত ঘাস তুলে সরাসরি বা শুকনো খড়ের সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো যায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁচা ঘাস বা খড়ের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয় এরং সারা বছরের ঘাসের চাহিদা পুরন করা সম্ভব হয়। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল হক জানান, প্রাণী সম্পদ বিভাগের অনুপ্রেননায় স্বাবলম্বী হতে ও খামারের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন খামারী ও কৃষকেরা। স্বল্প শ্রমে অল্প ব্যয়ে অধিক লাভের আশায় তাদের এই ঘাসের চাষ। এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় দেড় মাস অন্তর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করেন তারা। ঘাস ব্যবসায়ীরা জমিতে এসে কিনে নেন তাদের ঘাস। যেসব পতিত জমি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় সারা বছরই খালি পড়ে থাকে সেই সকল জমি সহ রাস্তার ধারে একটু সচেতন হলেই আমরা এ জমিগুলো কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারি। নেপিয়ার ঘাস পরিত্যক্ত জায়গায় ভালো জন্মে। চাষ পদ্ধতি ও গুণাগুণ সম্পর্কে কৃষক অবগত হলে ঘাসের চাষে তারা আরোও উৎসাহিত হবেন। ঘাস চাষ চাষ কর্মসংস্থানের নতৃন দিগন্তের সূচনা করেছে।