জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠার অনুরোধে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান-
মোঃ খোরশেদ আলম
ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান।
অদ্য ১২ জুলাই, ২০২৩ ইং বোধবার স্থানীয় পিটিআই গেইট, ফুলবাড়ীয়া, জামালপুরে উল্লেখিত দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের অনুষ্ঠানে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এম এইচ মজনু মোল্লা,সভাপতি বাংলাদেশ মানবতা ফোরাম ও নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ,জামালপুর জেলা শাখার নের্তৃত্বে, মোঃ মনিরুজ্জামান খান অধ্যক্ষ জামালপুর হোমিও কলেজ, মোহাম্মদ এনামুল হক, প্রধান নির্বাহী, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(এসপিকে), সূর্য তোরণ সমাজ সেবা সংস্থা এর নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী মোঃ খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ সেলিম, নির্বাহী পরিচালক, রুরাল এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, মোহাম্মদ রফিকুল ইলাম সরকার, নির্বাহী পরিচালক, এসডিও, মোঃ আনিছুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক,অগ্রদূত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, মোছাঃ মোস্তাকিমা, নির্বাহী পরিচালক, রশিদপুর বটতলা সিবিও, আসমা খন্দকার আশা, নির্বাহী পরিচালক, জামালপুর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টঅর্গানাইজেশন,ডাঃ ইসমাত জাকিয়া তানজিম (আঞ্জু),সদস্য, বাপা, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, প্রগতি কৃষি উন্নয়ন সংস্থা সহ আরও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জনগন উক্ত মানব বন্ধনে অংশগ্রহন করেন। উক্ত মানব বন্ধন শেষে সাতটি সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক, জামালপুরের মাধ্যমে প্রদান করেন। স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখাতে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতিও রয়েছে। তার মধ্যে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ুবৃদ্ধি,সারা দেশে ডিজিটাল হাসপাতাল- ‘ইনস্ট্যান্ট ডক্টর ভিডিও কল ও চ্যাট’, টেলিমেডিসিন সেবা চালু, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু ইত্যাদি। যার ফলে এমডিজি অ্যাওয়ার্ড-২০১০ অর্জন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পোলিও নির্মূল সনদ লাভ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও অর্জন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুসারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ” হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এর চারটি ভিত্তি হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ। এটির বাস্তব রূপ দেবার জন্য অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি স্মার্ট নাগরিক এর জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরী। স্বাস্থ্য বান্ধব রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” থেকে “স্মার্ট বাংলাদেশে” রূপান্তরের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রধান উপাদান স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের এই উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে দ্রত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গত ১০ বছরের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, প্রতিনিয়তই বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে উদ্ভুত পরিস্থিতি রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য বিরাট সংকট তৈরী করবে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেটের সিংহ ভাগই চিকিৎসা কেন্দ্রিক। শুধু মাত্র চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অর্থ ব্যয় করে ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
“বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১” লক্ষ্য রেখে এ ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে এবং স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হবে। অন্যথায় জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও বার্ধক্য জনিত রোগ সহ অসংক্রামক (হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) রোগ আক্রান্তের সংখ্যা দ্রতবৃদ্ধি পাবে। যার ব্যয় ভার রাষ্ট্র বা জনগণের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন উদ্যোগ স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি কৃষি, খাদ্য, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় গুলো সমন্বিত ভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের ২৩ টি দেশ “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এবং নির্ধারিত ফান্ড দ্বারা পরিচালিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে গবেষণার আলোকে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গবেষণা ও এডভোকেসির পাশাপাশি যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক।
হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন তামাক, এলকোহল, অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ন্ত্রণ এবং সম্ভাব্য অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সফলতার সাথে কাজ করছে। তারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় তুলনা মূলক অল্প বিনিয়োগ করে সহজে রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তামাক এবং এলকোহলের উপর নির্ধারিত কর আরোপ করে এ ধরণের ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আরোপিত কর সরাসরি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখছে। যারফলে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা এসেছে।
প্রথমত: স্বাস্থ্যহানীকর পণ্যের কর বৃদ্ধি এর ব্যবহার কমাতে ভূমিকা রাখছে।
দ্বিতীয়ত: নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট একটি অর্থের যোগান তৈরি হচ্ছে ফলে সরকারের উপর বাড়তি চাপ কমে আসছে।
তৃতীয়তঃ এ খাতে অর্থের পরিমাণ কম হলেও দীর্ঘমেয়াদী কর্ম পরিকল্পনাপ্রণয়ন ও বাস্তবায়নেরমাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ঘটছে। আমরা আশা করি, আপনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত এ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে শুধু মাত্র চিকিৎসা নয় স্বাস্থ্যটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।