বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার কথা অনেকে জানে না :

এস এম আজিজুল হাকিম– মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কাগজ হাতে ঘুরাঘুরি করছিলেন দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা একজন এসেছেন যশোর থেকে আরেকজন ময়মনসিংহ দুই জনই এসেছেন তাদের চিকিৎসার জন্য  সাহায্য চাইতে। তবে তারা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কাছে পৌঁছতে পারছেন।

নিজেদের সমস্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয় লিংক রোডে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে চিকিৎসা সহায়তার জন্য এই দুজনেই মন্ত্রণালয়ে আসার দরকার ছিল না। তারা হাসপাতালে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলেই চিকিৎসা সেবা পেতেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের বিশেষায়িত ২৪ টি হাসপাতালে মুমুর্ষ বা জটিল রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। তারা এসব হাসপাতাল থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হলে হাসপাতলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা ব্যয় করা হবে।

আর সাধারণ রোগের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা বছরে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। উপরের দুজনের মত দেশের বহু বীর মুক্তিযুদ্ধাই সরকারের দেওয়া এই চিকিৎসা সুবিধার কথা জানেনা। এই সুবিধার কথা তেমন প্রচারও পায়নি। এ নিয়ে ২০ জেলায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয়েছে ৭১ টাইমস নিউজের। তাদের বেশি ভাগই চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হাসপাতাল গুলোর নাম বা দুই লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি জানেনা। এমন একজন ফরিদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার নজরুল ইসলাম ৭১ টাইম নিউজকে তিনি বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা চিকিৎসা সুবিধা পাবেন এমন কোন তথ্য তার জানা নেই। এ নিয়ে কোন ঘোষণা শোনেননি তিনি এই সংক্রান্ত পরিপত্রও দেখেননি।

আগে সরকারি হাট-বাজারের ইজারা টাকা থেকে চারভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফান্ডে দেওয়া হতো। ওই অর্থ অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হতো তবে তা এখন বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টু গোলাপ চৌধুরী বলেন মুক্তিযোদ্ধারা বেশিরভাগ আর্থিক ভাবে অসচ্ছল। অনেকে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না।

অথচ সরকার তাদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ রেখেছে তা তারা জানেনই না।এই টাকা পেলে তারা অনেক উপকৃত হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধার বিষয়টি অনেকে জানেনা।

বলে স্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ৭১ টাইমস নিউজকে তিনি বলেন ২৪ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও বেশিরভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি জানেনা। প্রচার কম হয়েছে বা যাদের এটা জানানোর দায়িত্ব তারা কাজটি ঠিকমতো করছে না। চিঠি পাঠিয়ে ও বিজ্ঞাপন দিয়ে সারা দেশে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করা হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাও চান তিনি। হাট বাজারের ইজারার টাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ব্যয়ের আগের নীতিমালা বাদ দিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর নতুন নীতিমালা করে সরকার। এরপর গত ৫  জুন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী হৃদরোগ কিডনি রোগ পক্ষাঘাত ক্যান্সার মস্তিষ্কের সংক্রমণসহ সম জাতীয় জটিল রোগের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেবা পাবেন।

বিশেষায়িত হাসপাতলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে ২ লাখ টাকা ব্যয় করা যাবে। মুমূর্ষ কোন বীর মুক্তিযোদ্ধার জরুরি অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে

। তবে এই বিষয়ে পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নগদ বাচ্চাদের মাধ্যমে এই টাকা দেওয়া হবে না। তারা হাসপাতাল থেকে সরাসরি চিকিৎসা নিতে পারবে। এজন্য কোন আবেদনের প্রয়োজন হবে না শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

তবে  মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী বা স্বামী বা সন্তান কেউ এই সুবিধা পাবে না। ২৪টি বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল জাতীয় কিডনি হাসপাতাল জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

জাতীয় নিউরো সাইন্স হাসপাতাল জাতীয় মানসিক হাসপাতাল বারডেম হাসপাতাল শেখ হাসিনা বান এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

হাসপাতাল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।