শিরোনাম
আমাকে যদি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন,এই সদর দক্ষিন উপজেলা মাদক মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বরুড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন। চট্রগ্রাম জয় করে ৭টি মেডেলে নিয়ে এলো লাকসাম সিতোরিউ কারাতে দো: এসোসিয়েশন” পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বরুড়া থানা”র ওসি প্রত্যাহার জামালপুরে অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু  বকশীগঞ্জে পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু  ইসলামপুরে ৪ সন্তানের জন্ম দিলেন খুশি বেগম মেলান্দহে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের অভিযোগ হত্যা জামালপুরে যুব সমাজই পরিবর্তনের অগ্রদূত শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ‘র কুমিল্লা বিভাগীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন”

সীমান্তে কান্নাকাটির মেলা অনুষ্ঠিত!

71Times / ১৭৪৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২

অনিল চন্দ্র রায়/ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মালদহ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কান্নাকাটির মেলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সিতাই থানায় কাটাতারের বেড়ার পাশে ভেরভেরি এলাকায় মালদহ নদীর তীরে গঙ্গাপুজা উপলক্ষ্যে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পযর্ন্ত উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র কঠোর নজরদারিতে সীমান্ত পিলার ৯১৫-এর কাছে মালদহ নদী তীরে এ মেলা চলে। প্রতিবছর বাংলা মাস চৈত্রে ওই সীমান্তে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমল থেকে এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে কোভি-১৯ মহামারীর কারনে গেল দুই বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হযনি বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয়রা বলেন, এ মেলা সীমান্তে মিলন মেলা হলেও স্থানীয়ভাবে এ মেলাটি কান্নাকাটির মেলা হিসেবে পরিচিত। উভয় দেশের মানুষজন অনেক দিনপর একত্রিত হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন সেজন্য এটি কান্নাতাটির মেলা হিসেবে পরিচিত।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ভাতিটারী গ্রামের বৃদ্ধ প্রতাপ চন্দ্র রায় (৭৬) তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র রায়ের (৪৭) সাথে কান্নাকাটির মেলায় এসেছিলেন তার মেয়ে নারায়নী রানীর (৪৪) সাথে দেখা করার জন্য। নারায়নী বিয়ে করে ভারতে বসবাস করছেন। চার বছর মেয়ের সাথে দেখা হলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন প্রতাপ চন্দ্র। তার মেয়ে নারায়নীও কান্নায় বেঙ্গে পড়েন। বাবা-মেয়ে একে অপরের গলা জড়াজড়ি করে বেশ কিচুক্ষন কান্নাকাটি করেন। সেই সাথে তাদের আত্মীয় স্বজনরাও কান্নায় মেতে উঠেন।
প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান’ আমার শরীরের অবস্থা ভালো নেই। যেকোন সময় মারা যেতে পারি। তাই মরার আগে মেয়ে নারায়নীকে দেখার জন্য সীমান্তে কান্নাতাটির মেলায় আসেন।’ ‘আমি মেয়েকে কিছু খাবার উপজার দিয়েছি। মেয়েও আমার জন্য খাবার এনেছিল,’ তিনি বলেন। ‘আমাদের পাসপোর্ট করার সামর্থ্য না থাকায় সীমান্তে কান্নাকাটির মেলায় আসি ভারতীয় আত্মী-স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য,’ তিনি বলেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার নয়ারহাট গ্রাম থেকে কান্নাকাটির মেলায় এসেছিলেন রতন চন্দ্র রায় (৬৪)। দেখা করেন ভারতে বসবাসরত ছোট ভাই সুরেশ চন্দ্র রায়ের (৬১) সাথে। প্রায় এক যুগ পর দুই ভাইয়ের দেখা হলে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় মেতে উঠেন। এসময় উভয় ভাই উবয় দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করেন এবং কুশল বিনিময় করেন।
’আমার যদি পাসপোর্ট করার সামর্থ্য থাকতো তাহলে আমি পাসপোর্ট করে ভারতে যেতাম। ভাইয়ের সাথে দেখা হলে আমার প্রাণটা জুড়ে যায়,’ বলেন রতন চন্দ্র রায়।

’আমার অসংখ্য আপন জন বাংলাদেশে বসবাস করছেন। ভারতেও আমার অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। আপনজনদের ছেড়ে কষ্টে বসবাস করছি। অনেক দিনপর দাদাসহ বাংলাদেশি আত্মীয় স্বজনদের দেখা হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি,’ জানান ভারতীয় নাগরিক সুরেশ চন্দ্র রায়। ‘যদি বেঁচে থাকি তাহলে আবারো সীমান্তেরিএই কান্নাকাটি মেলায় আমরা মিলিত হবো আগামি বছর,’ তিনি বলেন।

সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা বলেন, উভয় দেশের নাগরিক মালদহ নদীতে পুণ্য স্নান করেন। বিমেষ করে ভারতীয় নাগরিকরা কাটাতারের বেড়ার পাশে ভেরভেরি এলাকায় গঙ্গাপুজা করার পর মালদহ নদীতে পুণ্য স্নান করে থাকেন। করোনা মহামারীর কারনে গেল দুই বছর সীমান্ত মেলাটি বন্ধ থাকায় এবছর দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো উপচেপড়া।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, সীমান্তে কান্নকাটির মেলাটি উৎফেুল্ল হয়ে উঠেছিল। লালমনিরহাটসহ পাশের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি এসেছিলেন কান্নাকাটির মেলায়। কেউ কেউ এসেছিলেন মেলা দেখার জন্য। অধিকাংশ মানুষ এসেছিলেন ভারতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে মেলাটি শান্তিপুর্ণভাবে শেষ হয়। মেলা চলাকালিন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।বিকাল ৫টা পযর্ন্ত সীমান্তে মালদহ নদীর তীরে ভীড় ছিলো মানুষজনের। বাংলাদেশিরা ফিরে যায় তাদের বাড়িতে আর ভারতীয় চলে যায় তাদের দেশে। বিকাল ৫টায় বিএসএফ বন্ধ করে কাটাতারের বেড়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Archives