বর্ষা এলেই মহাসড়কগুলোতে ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যায়। এবারও করোনা আর বর্ষার সুযোগ নিয়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় মহাসড়কে ডাকাতদের তৎপরতা অতিমাত্রায় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য মহাসড়কে তৎপর থাকা ডাকাতদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযানে নেমেছে হাইওয়ে পুলিশ। পাশাপাশি ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া ডাকাতদের ডাটাবেজ মোতাবেক তাদের বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করার কাজ চলছে। ডাকাতি রোধে মহাসড়কের ডাকাতিপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করার পাশাপাশি ডাকাতদের চিহ্নিত করতে মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। একই সাথে টহল জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে দুই শতাধিক ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম-মহাসড়কে ডাকাতরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। ওই মহাসড়কের ডাকাতদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গার্মেন্টস সামগ্রী ও গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক। এমন পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস মালিকদের তরফ থেকে তাদের পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের কাছে সার্বিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছরই বর্ষায় মহাসড়কে ডাকাতদের তৎপরতা বেড়ে যায়। মূলত বর্ষার কারণে অনেক মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় পণ্যবাহী যানবাহনের গতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। আর এমন সুযোগটিকেই ডাকাতরা কাজে লাগায়। এবার বর্ষার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। স্বাভাবিক কারণেই ডাকাতরা এবার বেশি তৎপর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সারাদেশের মহাসড়কই ডাকাতদের পছন্দ নয়। ডাকাতদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কারণ ওই মহাসড়কটি দিয়েই সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টসসামগ্রী আনা-নেয়া হয়। তাছাড়া ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কও ডাকাতদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তবে তা তুলনামূলক কিছুটা কম। প্রতিটি মহাসড়কের কমবেশি তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টসসামগ্রী, সিমেন্ট, রড আনা-নেয়া হয়। হাইওয়ে ডাকাতদের ওসবই বেশি পছন্দ। তবে একমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতেই মহাসড়কের ডাকাত আর নৌ-ডাকাতদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ আছে। কোন কোন সময় মহাসড়কে ডাকাতি করা মালামাল নৌ-ডাকাত দলের ট্রলারে করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। আবার নৌ-ডাকাতরা এবং মহাসড়কের ডাকাতরাও সম্মিলিতভাবে মহাসড়কে ডাকাতি করে। তাছাড়া ঢাকা-খুলনাসহ অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কে সাধারণত যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি হয়। রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে ব্যরিকেড দিয়ে, গাছ ফেলে, জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে রাস্তার মাঝখানে শুইয়ে রেখে, বাসের যাত্রী সেজে ডাকাতরা ডাকাতির ঘটনাগুলো ঘটায়। আবার খালি যানবাহন দিয়েও ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হয়।
সূত্র আরো জানায়, অধিকাংশ সময়ই ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়। যেজন্য সবচেয়ে বেশি কঠিন যারা ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে ডাকাতির উদ্দেশেই ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে তাদের আটক করা। এক ধরনের চালক আছে যারা ডাকাত দলের সদস্য। তারা পণ্যবাহী যানবাহন মহাসড়কের নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে তার সহযোগী ডাকাতরা তাদের লোক দেখানোর জন্য হাত-পা বেঁধে ডাকাতি করে। পরবর্তীতে লোকজন তাদের উদ্ধার করলে সত্যিকারের ডাকাতি হয়েছে বলে মনে হয়। মহাসড়ক ডাকাতদের মূল টার্গেট গার্মেন্টস পণ্যবাহী যানবাহন ও রড-সিমেন্ট বোঝাই পরিবহন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। সেজন্য ওই মহাসড়কটিতে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোন কোন জায়গায় বসানোও হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
এদিকে মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই বর্ষায় মহাসড়কে ডাকাতদের তৎপরতা বাড়ে। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। কারণ বর্ষায় গাড়ির গতি কম থাকে। এমন সুযোটিকে কাজে লাগায় ডাকাতরা। সেজন্য দেশের মহাসড়কের যেসব স্থান ডাকাতিপ্রবণ সেসব জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব পয়েন্টে স্ট্যান্ডবাই হাইওয়ে পুলিশের টহল পার্টি রাখা হচ্ছে। আবার সেখানে রেকারও রাখা হচ্ছে। কারণ মহাসড়কের ওসব জায়গায় ডাকাতির পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটে। মূলত দ্রুত যানবাহন সরিয়ে যানজট নিরসনের জন্যই স্ট্যান্ডবাই রেকার রাখার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি বাস স্টপেজ থেকে যাত্রীবাহী বা মালবাহী গাড়ি ছাড়ার আগে তাদের ভিডিও করতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি সারাদেশে মহাসড়কের ডাকাতিতে জড়িত ডাকাতদের ডাটাবেজ আপডেট করা হচ্ছে। তাদের বর্তমান অবস্থান জানার চেষ্টার পাশাপাশি গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বর্তমানে দুটি থানাসহ মোট ৭০টি ফাঁড়ির মাধ্যমে মহাসড়কের দুর্ঘটনাসহ ডাকাতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত অব্যাহত আছে।