সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে
ঢাকা, ১৮ জুন ২০২৩: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি ও বকশীগঞ্জের একাত্তর তিভির প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি আর্টিকেল নাইনটিন দ্রুততার সাথে এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।
আর্টিকেল নাইনটিন এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, “সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যা বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকা আক্রমণের নিকৃষ্ট উদাহরণ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং স্বাধীনভাবে তদন্ত করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা। অসংখ্য আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক মানবাধিকার দলিলে রাষ্ট্রগুলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কার্যকর প্রতিকার প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। এই বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাংবাদিকদের উপর চলমান সহিংসতা ইতিমধ্যে একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যার অনতিবিলম্বে অবসান করা অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা সহ বেশিরভাগ সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় নি, যা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং সংঘটিত অপরাধ দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উস্কে দিয়েছে। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের দায়মুক্তির চর্চা গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম (৪৩) বাংলানিউজের জামালপুর প্রতিনিধি ও বকশীগঞ্জে একাত্তর টিভির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। বিগত ১৫ বছর ধরে তিনি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। গত ১৪ জুন ২০২৩ (বুধবার) বাসায় ফেরার পথে জামালপুরের বকশীগঞ্জে চলন্ত মোটরসাইকেল থামিয়ে তাঁকে প্রথমে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর ১৪-১৫ জনের একটি গ্রুপ তাঁকে টেনে হিঁচড়ে এলোপাতারি কিলঘুসি মারতে থাকে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে এমন দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানা যায়। মারধরে আহত নাদিমকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
আর্টিকেল নাইনটিন দ্রুততার সাথে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম কর্মীদের উপর এরকম ধারাবাহিক হামলা খুবই উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সাংবাদিক সহ সকল গণমাধ্যম কর্মীদের যথাযথ সুরক্ষা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই আর্টিকেল নাইনটিন, এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
সম্পাদকের নোটঃ
আর্টিকেল নাইনটিন একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা নিশ্চিতে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি ২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এর কার্যক্রম শুরু করে।